* জবর দখল বলতে কি বুঝ?
* উহার উপাদানগুলি কি কি?
* জবর দখলের সময় লাগে কত দিন?
* কখন জবর দখলকৃত সম্পত্তিতে দখলকারীর স্বত্ব অর্জিত হয় এবং প্রকৃত মালিকের স্বত্ব বিলোপ হয়?
* জবর দখলকারী কি চুড়ান্ত মালিকানা অর্জন করতে পারে?
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৮ ধারায় জবর দখল সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন আইনগত স্বত্বের(সম্পত্তির) বিরুদ্ধে প্রতিকূল বা বিরুদ্ধ দখলকেই জবর দখল বলে।
অর্থাৎ যখন কোন বিবাদীর দখল বাদীর প্রতিকূল হয় তখনই জবর দখলের সৃষ্টি হয়।
অন্য কথায়, ১২ বৎসর এর বেশী সময ধরে অপরের সম্পত্তি জোর পূর্বক দখলে রাখলে এবং উক্ত দখলের মধ্যে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সম্পত্তির প্রকৃত মালিক আদালতে শরণাপন্ন না হলে ঐ সম্পত্তির উপরে জবর দখলকারীর স্বত্ব অর্জিত হয় এবং তামাদি আইনের ভাষায় একেই জবর দখর বলে।
জবর দখল বা বিরুদ্ধ দখলের উপাদান:
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৮ ধারার সম্পত্তির অধিকারের অবসান কথাটির আলোকে সম্পত্তি জবরদখল বা বিরুদ্ধ দখলের জন্য যে সমস্ত উপাদানের কথা বলা হয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে -
১) জবরদখরকারীকে প্রকৃতপক্ষে জমিতে দখলদার থাকতে হবে। জবরদখরকারীর দখল নাই অথচ খতিয়ানে তার নামে দখল দেখা আছে এরুপ কাগজী দখলের কোন কাজ হবে না।
২) সম্পত্তির দখল নিরবচ্ছিন্ন, প্রকাশ্য এবং প্রকৃত মালিকসহ অন্যান্য সকলের বিরুদ্ধে হতে হবে। এজন্যই এই ধরনের দখলের অপর নাম বিরুদ্ধ দখল জনিত স্বত্ব।
৩) জবর দখরকারীর সম্পত্তিটি জোরে দখলে রাখার ইচ্ছা থাকতে হবে।
৪) জবরদখল প্রকৃত মালিকের জ্ঞাত সারে হতে হবে।
৫) আইনসম্মতভাবে প্রথম দখল আরম্ভ হলে , পরে জবরদখল দাবী উত্থাপন করা যাবে না।
৬) বাদীর স্বত্ব অঙ্গীকারে জবরদখলকারীকে নিজের দাবীতে জমিতে দখলদার থাকতে হবে।
• জবর দখলের ক্ষেত্রে সময় লাগে কতদিন:
যখন কোন বিবাদীর দখল বাদীর প্রতিকুল হয় তখনই উহা জবর দখল হয়। ১২ বৎসর এর বেশী সময় ধরে অপর এর সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলে রাখলে এবং উক্ত দখলের মধ্যে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য সম্পত্তি প্রকৃত মালিক আদালতে শরণাপন্ন না হলে ঐ সম্পত্তির উপরে জবরদখলকারীর স্বত্ব(মালিকানা) অর্জিত হয়।
তাই বলা যায় যে, ১২ বৎসর সময়কালই জবরদখলের সময় হিসাবে গণনা করা হয়। যা ১৯০৮ সালের তামাদি আইনে ২৮ ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে।
• কখন জবর দখলকারীর সম্পত্তিতে স্বত্ব (মালিকানা) অর্জিত হয়:
তামাদির সময়সীমা স্বত্বের মামলার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে ১২ বছর। ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৮ ধারার বিধান মতে কোন বাদী যদি তার খাস দখলীয় জমি হতে বিবাদী কর্তৃক বেদখল হয় সেক্ষেত্রে বাদীকে অবশ্যই বেদখলের তারিখ হতে ১২ বৎসরের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে বিবাদীর বিরুদ্ধে স্বত্বসাব্যস্তে (মালিকানার প্রমাণ দিয়ে) খাস দখলের জন্য মামলা করতে হবে। অন্যথায় দাবীকৃত জমিতে বাদীর সকল প্রকার অধিকার এবং স্বত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে।
অন্যদিকে এ আইনের ২৬ ধারায় বিধানের আলোকে ব্যবহার সিদ্ধ অধিকারের কারণেও উক্ত সম্পত্তিতে বিবাদীর অধিকার অর্জিত হয়। উল্লেখ্য এই জন্য তামাদি আইনের ২৬ ধারাকে অর্জনকারী প্রিশক্রিপশন বলে।
যে সময় হতে জবর দখলের কারণে বাদীর মালিকানা বিলুপ্তি হয়ে যাবে ঠিক ঐসময় হতেই জবর দখলকারীর উপর সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা বর্তাবে। আর এভাবেই জবর দখলের মাধ্যমে প্রকৃত মালিক ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির সম্পত্তির উপর বৈধ বা আইনগত স্বত্ব(মালিকানা) অর্জিত হয়ে থাকে।
• কখন প্রকৃত মালিকের স্বত্ব(মালিকানা) বিলুপ্ত হয়:
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন সম্পত্তির দখল প্রাপ্তির জন্য মামলা দায়ের করার ব্যাপারে এই আইনের যে মেয়াদ নির্ধারিত করে দেয়া আছে তা উত্তীর্ণ হবার পর উক্ত সম্পত্তিতে দাবীর বিলুপ্তি হয়ে যাবে। তাই তামাদি আইনের ২৮ ধারাকে বিলোপকারী প্রেসক্রিপশনও বলা হয়।
এই ধারার বিশ্লেষনে বলা যায় যে, দখল উদ্ধারের জন্য তামাদির মেয়াদ প্রথম তফসিলে বর্ণিত আছে। উক্ত নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে ঐ সম্পত্তির উপর দাবীকারীর স্বত্ব লোপ পায়। আর এই আইনের ১৪২ অনুচ্ছেদ মোতাবেক তামাদি(মামলার মেয়াদ) গণনা করা হয়।